নেত্রকোণাঃ জেলার বারহাট্টা উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে নেই কোনো চালক। এতে করোনা কালীন সময়ে চিকিৎসাসেবা নিতে পারছেন না উপজেলার হাজার হাজার মানুষ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে জরুরী চিকিৎসাসেবা নিতে এই উপজেলার মানুষকে ভরসা করতে হয় বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস অথবা ভটভটি ও রিকশাভ্যানের ওপর। এতে বাড়তি ভাড়া ও চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয় রোগী ও স্বজনদের।
বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সর্বশেষ অ্যাম্বুলেন্স চালক প্রায় সাড়ে তিন মাস আগে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার গাড়ির চালক দিয়ে কিছুদিন অ্যাম্বুলেন্সটি চালানো হয়। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার গাড়ি বরাদ্দ হওয়ায় তার মূল দায়িত্বে ফিরে যান ওই চালক। এতে চালকশূন্য হয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি পড়ে আছে। তিন মাস অতিবাহিত হলেও এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নতুন কোনো অ্যাম্বুলেন্স চালক পদায়ন না হওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্েরর গ্যারেজে খোলা আকাশের নীচে অ্যাম্বুলেন্সটি পড়ে আছে। এতে অ্যাম্বুলেন্সের যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে করোনার সময়ে শুধুমাত্র নমুনা পৌঁছানোর কাজে অ্যাম্বুলেন্সের চালক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার গাড়ি চালক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গুরুতর রোগীদের এখান থেকে স্থানান্তর করা হয় নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। স্থানান্তরীত রোগীদের পরিবহনের জন্য স্বজনদের ছুটতে হয় প্রাইভেট গাড়ির জন্য। আর এই সুযোগে প্রাইভেট গাড়ির মালিকরা সরকারি ভাড়ার তুলনায় অনেক বেশী অর্থ আদায় করে থাকেন। বিপদে পড়ে বেশী টাকা দিয়েই উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়মিত রোগী পরিবহন করেন রোগীর স্বজনরা।
বারহাট্টা উপজেলার আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম আজাদ বকুল জানান, সপ্তাহখানেক আগে রাতের বেলায় রোগী নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাই। রোগীর সমস্যা গুরুতর হওয়ায় সেখান থেকে নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু নেত্রকোণায় যাওয়ার জন্য সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চালক না থাকায় আমাকে সমস্যায় পড়তে হয়। পরে বেশী টাকা দিয়ে প্রাইভেট একটি মাইক্রো নিয়ে আমাকে যেতে হয়। এতে টাকা বেশী লাগলেও মাইক্রো ম্যানেজ করতে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়।
বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তিন মাসের অধিক সময় ধরে অ্যাম্বুলেন্সটির চালক নেই। এতে করে রোগী আনা নেওয়ার কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সিভিল সার্জন ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক স্যারকে জানানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে চালক নিয়োগ করা হবে বলে আশা করছি।
নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান জানান, করোনা কালীন সময়ে বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেশ কিছুদিন ধরে অ্যাম্বুলেন্সের চালক না থাকায় এলাকাবাসীর জরুরী সেবা নিতে সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। চালক নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চালক দিয়ে জরুরী রোগীদের আনা নেওয়ার জন্য অ্যাস্বুলেন্সটি চালানোর চিন্তা করা হচ্ছে।